উত্তম বা আদর্শ পরিকল্পনার বৈশিষ্ট্য
উত্তম বা আদর্শ পরিকল্পনার বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর।
পরিকল্পনা হলো ভবিষ্যৎ কার্যক্রমের পূর্বনির্ধারিত নকশা বা চিত্র। ব্যবস্থাপনা কার্য প্রক্রিয়ায় পরিকল্পনা প্রথম ও প্রধান গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এর এমন কিছু বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান যা ব্যবস্থাপনার অন্যান্য কার্য হতে একে স্বতন্ত্র স্বপ প্রদান করেছে। উত্তম বা আদর্শ পরিকল্পনার বৈশিষ্ট্য নিম্নে আলোচনা করা হলো:
১। সুস্পষ্ট উদ্দেশ্য: একটি উত্তম বা আদর্শ পরিকল্পনা অবশ্যই সুস্পষ্ট উদ্দেশ্যকেন্দ্রিক হয়ে থাকে। প্রতিষ্ঠানে সামগ্রিক একটা উদ্দেশ্য যেমনি থাকে তার আলোকে প্রত্যেক বিভাগ-উপবিভাগেরও উদ্দেশ্য নির্ধারণ করে সে অনুযায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।
সরলরৈখিক সংগঠনের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর/Discuss the characteristics of line organization
২. বাস্তবমুখিতা: পরিকল্পনা অবশ্যই বাস্তবমুখী হতে হয়। বাস্তবমুখিতা বলতে ভবিষ্যৎ অবস্থা বিবেচনায় পরিকল্পনা বাস্তবায়নযোগ্য হওয়াকে বুঝায়। বৃহত্তর উদ্দেশ্য এবং তার আলোকে একটি বড় ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করলেই তা সুফল দিতে পারে না। অবাস্তব পরিকল্পনা সবার মাঝে তাৎক্ষণিক কিছুটা আশাবাদ সৃষ্টি করতে সমর্থ হলেও কার্যক্ষেত্রে তা কখনই কাঙ্ক্ষিত ফল দেয় না। বরং পরবর্তীতে তা হতাশা ও নানান ধরনের জটিলতা সৃষ্টি করে।
৩. গ্রহণযোগ্যতা: গৃহীত পরিকল্পনা যাদের দ্বারা বাস্তবায়িত হবে তাদের নিকট এটি গ্রহণযোগ্য হওয়া উচিত। কর্মীরা যদি পরিকল্পনাকে কোনো কারণে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করতে না পারে তবে তার সঠিক বাস্তবায়ন আশা করা যায় না। এজন্য গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা বা অংশীদারিত্বমূলক ব্যবস্থাপনায়-এর প্রতি আজকাল গুরুত্বারোপ করা হয়।
৪. সঠিক পথ-নির্দেশনা: বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত করণীয় বিষয়ে পরিকল্পনা থেকে যেন নির্দেশনা পাওয়ার সম্ভব হয় এটা নিশ্চিত করাকেই পরিকল্পনার সঠিক পথনির্দেশনা বলে। একটা প্রণীত পরিকল্পনা অবশ্যই সঠিক পথ নির্দেশক হওয়া উচিত। যাতে তা প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে সঠিক পথ-নির্দেশ করতে পারে। এজন্য যতদূর সম্ভব পরিকল্পনা বিশদ বর্ণিত ও পূর্ণাঙ্গ হওয়া উত্তম।
৫. সমন্বয় ও যোগসূত্র: বিভিন্ন পর্যায়ে গৃহীত পরিকল্পনাকে মূল লক্ষ্যের আলোকে একসূত্রে সংযুক্ত করার কাজই হলো পরিকল্পনায় সমন্বয় ও যোগসূত্র স্থাপন। প্রতিষ্ঠানের সকল স্তরেই যেহেতু পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হয় তাই একটি আদর্শ পরিকল্পনায় সকল স্তর বা বিভাগের মধ্যে সমন্বয় ও যোগসূত্র রক্ষা করা হয়ে থাকে। প্রতিষ্ঠানের মূল পরিকল্পনা পূর্ব সময়ে গৃহীত পরিকল্পনার সাথে এবং বিভিন্ন স্তরে গৃহীত পরিকল্পনা মূল পরিকল্পনার সাথে সমন্বিত হওয়া আবশ্যক। বিক্রয় বিভাগ ও উৎপাদন বিভাগের পরিকল্পনায় যোগসূত্রিতা না থাকলে উভয় পরিকল্পনায় যে অকার্যকর তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
৬. নমনীয়তা: পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে সঙ্গতি বিধানের সামর্থ্যকে নমনীয়তা বলে। একটি উত্তম পরিকল্পনায় নমনীয়তার সুযোগ থাকা আবশ্যক। সম্ভাব্য যে সকল আবস্থার মধ্য দিয়ে পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে বলে ধরে নিয়ে পরিকল্পনা প্রণীত হয় তা সবসময় মিলবে এমন আশা করা যায় না। তাই অবস্থার পরিবর্তন হলে যতটা সম্ভব দ্রুততার সাথে পরিকল্পনা সংশোধন করতে হয়। পরিকল্পনা প্রণেতাগণ যদি আগে থেকে বিকল্প অবস্থায় করণীয় ঠিক করে রাখেন সেক্ষেত্রে এরূপ পরিবর্তন সহজ হয়ে থাকে। যাকে পরিস্থিতিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা বলে। নমনীয় বাজেট (Flexible budget) তৈরি এর একটি উত্তম উদাহরণ।