আপনার মালিকানাধীন জমি অন্য কেউ নামজারি করলে করণীয় কী?
আপনার মালিকানাধীন জমি অন্য কেউ নামজারি করলে করণীয় কী?
জমি বিক্রির পর জমির মালিক সে জমি পুনরায় আরেকজনকে বিক্রি করেন। একই জমি এরকম একাধিক বার ও জমি বিক্রির ফলে সৃষ্টি হয় মালিকানা নিয়ে জটিলতা।
এরকম ঘটার কারণ হলো, জমি বিক্রির পর দুটি দলিল সৃষ্টি হয়। একটি রেজিস্টার্ড দলিল, অন্যটি নামজারি খতিয়ান। অনেকে দলিল রেজিস্ট্রি করার পর মনে করেন দলিল রেজিস্ট্রি হয়ে গেছে সুতরাং জমি আমার হয়ে গেছে। তিনি নামজারি করার দিকে তেমন গুরুত্ব দেন না।
বাংলাদেশের ভূমি ব্যবস্থাপনায় একটি বড় সমস্যা হলো ভূমির দলিল রেজিস্ট্রি ও নামজারি খতিয়ান দুটি দুই মন্ত্রণালয়ের অধীনে। দলিল রেজিস্ট্রি আইন মন্ত্রণালয় এবং নামজারি খতিয়ান ভূমি মন্ত্রনালয়ের অধীনে। ফলে সমন্বয় না থাকার কারণে একই জমি একাধিকবার বিক্রি সম্ভব হয়। কারণ দলিল রেজিস্ট্রি করার সময় তফসিলভুক্ত ভূমি সরেজমিনে দেখা হয়না পূর্বে কেউ এই জমির মালিক হয়েছেন কি না। এটি দেখা যায় যখন নামজারি খতিয়ান করতে যায়। কারণ তখন জমির মালিকানা খতিয়ান বালাম অনুসারে সরেজমিনে গিয়ে মালিকানা যাচাই করা হয়।
জমি রেজিস্ট্রির পর সরকারি বালামে উক্ত জমির মালিক হিসেবে বিক্রেতার নাম থেকে যায়। যদি জমি কেনার পর ক্রেতা যদি তার নামে নামজারি না করেন। ঠিক যে কারণেই, উক্ত জমি যদি দ্বিতীয়বার বিক্রি করা হয়, সে মালিক খুব সহজেই নামজারি করে ফেলতে পারেন। যখন প্রথম ক্রেতা জমি ভোগ দখলে যায় কিংবা খাজনা দিতে যায় তখন দ্বিতীয় মালিকের সাথে মালিকানা বিষয়ে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। কারণ দ্বিতীয় মালিকের কাছেও তার মতো রেজিস্ট্রি দলিল আছে, নামজারি খতিয়ানও আছে। প্রথম মালিকের রেজিস্ট্রি দলিল থাকলেও নামজারি খতিয়ান নেই। তাই তিনি মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন এবং হতাশ হয়ে যান। এমতাবস্থায় তার করণীয় কি?
আইনি প্রতিকার
এসিল্যান্ড তার প্রদত্ত নামজারি খতিয়ান নিজ উদ্যোগে বা কারো আবেদনের প্রেক্ষিতে বাতিল করে দিতে পারেন। এটিকে এসিল্যান্ড কতৃক রিভিউ বলা হয়। State Acquisition and Tenancy Act, 1950 এর ১৫০ ধারা বলে তিনি রিভিউ ক্ষমতা প্রয়োগ করেন। এ ধরণের আবেদনকে মিস মামলা বলে।
এবার জেনে নিই কীভাবে মিস মামলা করতে হয়? এক্ষেত্রে একজন ভূমি বিশেষজ্ঞের বা আইনজীবীর প্রয়োজন হতে পারে।
১. দরখাস্ত দাখিল:
এক্ষেত্রে আপনাকে সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা এসিল্যান্ড অফিস বা ভূমি অফিসে নামজারি খতিয়ান বাতিল করার জন্য আবেদন করতে হবে। কোর্ট ফি ২০ টাকা দিয়ে বাদী, বিবাদীর নাম, তফসিলভুক্ত সম্পত্তির বর্ণনা এবং নামজারির ফলে আপনার কী স্বার্থ ক্ষুন্ন হয়েছে এবং কীভাবে ক্ষুন্ন হয়েছে লিখে আবেদনপত্র জমা দিতে হবে। সাথে রেজিস্ট্রি দলিলও সংযুক্ত করে দিতে হবে।
২. দরখাস্ত গ্রহণ:
আবেদন পত্র দেখে এসিল্যান্ড যদি আবেদনপত্রটি গ্রহণ করেন তাহলে তিনি বিবাদী বরাবর নোটিশ পাঠাবেন। যে অমুক তারিখে, বিরোধীয় সম্পত্তির পক্ষে দলিল পত্র নিয়ে হাজির হওয়ার জন্য। অবশ্য তামদির বিষয়টি তিনি নিশ্চিত হবেন। তিনি আবেদন গ্রহণ করলে একটি নম্বর দিবেন যাকে মিসকেস নম্বর বলে।
৩. শুনানি:
উক্ত তারিখে উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনবেন। দলিল পত্র পরীক্ষা করবেন।
৪. তদন্ত:
এসিল্যান্ড উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনার পর প্রয়োজন মনে করলে সার্ভেয়ার বা তহসিলদারকে উক্ত জমির মালিকানা বিষয়ে সরেজমিনে তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দেয়ার জন্য বলবেন।
৫. তদন্ত রিপোর্ট দাখিল:
সার্ভেয়ার বা তহসিলদার সরেজমিনে তদন্ত করে এসিল্যান্ড অফিসে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিবেন।
৬. পুনঃ শুনানি:
উক্ত তদন্ত রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর এসিল্যান্ড উভয়বপক্ষের সাথে বসে বক্তব্য শুনবেন।
৭. রায় প্রদান:
পুনঃ শুনানি শেষে, তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে এসিল্যান্ড রায় ঘোষণা করবেন। রায় যদি প্রথম মালিকের পক্ষে আসে তাহলে পূর্বের নামজারি বাতিল করে তার নামে নামজারি হবে।
এসিল্যান্ডের নিকট এই ধরণের আবেদনকে মিস মামলা বলা হয়। এধরণের প্রতিকারের মূল সমস্যা হলো তামাদি। অর্থাৎ নির্দিস্টই সময় অতিকক্রান্ত হয়ে গেলে আবেদন খারিজ হয়ে যেতে পারে। SAT Act, 1950 এর ১৫০ ধারায় বলা হয়েছে প্রথম নামজারি করার ৩০ দিনের মধ্যে নামজারি বাতিলের আবেদন করতে হবে। যদি ৩০ দিন অতিক্রান্ত হয়ে যায় সেক্ষেত্রে এসিল্যান্ডকে দেরি করার কারণ বিষয়ে সন্তুষ্ট করা গেলে তিনি আবেদনটি গ্রহণ করতে পারেন অন্যথায় আবেদন খারিজ করে দিবেন।
সংগৃহীত